প্রতিবছরই কুরবানির পশুর চামড়া কিনতে দেওয়া হচ্ছে সহজে ঋণ কিন্তু আদায় হয় না। এছাড়া চামড়া খাতে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন সময় বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের অর্থ নিজের মনে করে খেয়ে ফেলছে ফেরত দিচ্ছে না। ফলে এ খাতে মন্দঋণ ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে চামড়া খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তিন মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বর প্রান্তিকে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ আর খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ২৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত চামড়া খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক ৭ হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণের ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিয়েছে ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২৬ কোটি ৫২ লাখ বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিয়েছে ১৮২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

জানা গেছে, দেশে সংগ্রহ করা পশুর চামড়ার বেশিরভাগই আসে ঈদুল আজহার সময়। এ কারণে প্রতিবছরই কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দেয় ব্যাংকগুলো। গত বছর যে ঋণ দিয়েছে তা পরিশোধ করলেই নতুন ঋণ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ঋণের বেশিরভাগই ফেরত দিতে পারছে না এ খাতের ব্যবসায়ীরা। যার কারণে মন্দঋণ কমছে না। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে পুনঃতফশিল করতে পারবে।

পাশাপাশি কাঁচা চামড়া কিনতে ঋণ পাবেন গ্রাহক। তবে নিয়মমতো ঋণ পরিশোধ না করায় চামড়া খাতে ঋণ দেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে চামড়া কিনতে যেখানে ৫৫৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। এবার তার অর্ধেকেরও কম ঋণ দিতে চায় সরকারি ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এসব ব্যাংক। যদিও এ পরিমাণ ঋণও শেষ পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ হয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটি দেয় ২০৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ২০১৯ সালে দেয় ১৫৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৭০ কোটি টাকা। করোনা শুরুর আগের বছর ব্যাংকটি দেয় ১৩০ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ২০১৯ সালে যেখানে দিয়েছিল ৭০ কোটি টাকা। এছাড়া ১৯৯০ দশকে বিতরণ করা চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত না আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাই বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।